গল্প লেখার

No comments

 গল্প

লেখকঃ মেহেদী হাসান শিহাব ♦️
কলেজের গেইটে পা রাখতেই কেউ ল্যাং মেরে ফেলে দেয় আরহিকে,। প্রায় এক হাত দূরে বালির উপর গিয়ে পরে আরহি,।
আশেপাশে থাকা সকলেই দৃশ্যটা দেখে মজা নিচ্ছে আবার কেউ কেউ অনুশোচনা করছে,।
বালি ওর পুরো শরীর জুড়ে লেগে আছে। কলেজের প্রথমদিন এরকম বিশ্রী ঘটনার মুখোমুখি হবে ভাবেনি ও,। বালির উপর থেকে উঠে জামা থেকে ধুলোবালি ঝাড়ছে।
দেয়ালের উপর পা দুলিয়ে হাসতে থাকে ৪-৫ টা ছেলে। এদের মধ্যেই কেউ আরহিকে ল্যাং মেরেছে,।
আরহি ওদের সামনে এসে কিছুক্ষণ তাকিয়ে কিছু না বলেই চলে যায়,।
ছেলেগুলো ভেবেছিলো হয়তো মেয়েটা অন্য মেয়েদের মতো গালি দিবে কিন্তু ও কিছুই বললো না।
ওদের মধ্যে একটা ছেলে অনুপ বলে উঠলো,।
--কাজটা বোধহয় ঠিক হয়নি মেয়েটা হয়তো অন্যাসব মেয়েদের মতো স্বাভাবিক না হয়তো কথা বলতে জানে না।
অনুপের কথায় সবাই স্বায় দিলো শুধু শিহাব বাদে,।
-মেয়েটা স্বাভাবিক আর কথাও বলতে জানে ওইদিকে তাকা দেখ হাসিমুখেই কথা বলছে।
সবাই তাকিয়ে অবাক সত্যি তো মেয়েটা কথা বলছে।
আরেকটা ছেলে রকিব বললো
তাহলে মেয়েটা আমাদের গালি দিলো না কেন,। মেয়েটা নিশ্চয় ভীতুর ডিম।
-প্রতিদিন মেয়েদের গালি খেতে খেতে বদ হজম হয়ে গেছে সবার গালি না খেলে মাথা ঠিক থাকে না।
আরেকটা মেয়ে আসছে শিহাব এবার ওকে ল্যাং মারতে হবে,। দেখ ভাই আমাদের কিন্তু মেয়েদের রাগ দেখতেই ভালো লাগে।
-সব মেয়ে রাগ দেখায় এই এলিয়েন মেয়েটা আসলো কোথা থেকে রাগ বলতে কিছু দেখলাম না ওর মাঝে।
-আজ কলেজে নতুন ব্যাচ আসছে ইন্টারের।
-মামা নতুন নতুন সুন্দরী মেয়ে এবার বোধহয় আমাদের প্রেম হবে সবার।
-আরে আমাদের বসের তো প্রেমিকা এবারের ব্যাচে কলেজে আসবে তাই না বস,।
-হুম জোনাকি এই কলেজে ভর্তি হয়েছে আজ নিশ্চয়ই আসবে।
-তাহলে বস আজকে আর কাউকে ল্যাং মারবো না ভুল করে যদি ভাবিকে ল্যাং মেরে বসি তাহলে আমাদের কি হাল হবে।
-ঠিক বলেছিস চল নতুন ক্লাসে গিয়ে দেখি জোনাকি এসেছে কি না।
শিহাব আর ওর সব বন্ধু মিলে আরহিদের ক্লাসে গেলো।
আরহি তখন সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।ওরা এসে সোজা টিচারের ডেস্কের উপর উঠে বসে।
-হাই গাইজ এটেনশন প্লিজ।
রকিবের কথা শুনে সবাই শান্ত হয়ে ওদের দিকে তাকায়। আরহি ওই ছেলেদের দেখে মাথা নিচু করে বই নিয়ে বসে আছে।
-আমরা হচ্ছি তোমাদের সিনিয়র আমরা সবাই অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আর এই যে উনি আমাদের বস কলেজের সবাই উনাকে বস বলে আজ থেকে তোমরা ও বলবা,।
বস আপনি ওদের উদ্দেশ্যে কিছু বলেন।
-হ্যালো আমি শিহাব অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অর্থনীতি। আমার আরেকটা পরিচয় আমি কলেজের ছাত্রনেতা আমার বাবা এই কলেজের সভাপতি।
শিহাবের কথা শুনে প্রায় সবাই বুঝে গিয়েছে বাবার পাওয়ার খাটিয়ে কলেজে নিজের জায়গা দখল করে আছে।
শিহাব আবার বলতে শুরু করলো -এই কলেজে কারো কোনো সমস্যা হলে আমায় বলবে কেউ যদি গরীব হয় বেতন,ফিস দিতে সমস্যা থাকে নির্দ্বিধায় আমাকে জানাবে আমি সব ব্যবস্থা করে দিবো।
শিহাবের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ক্লাসে ছুটে আসলো জোনাকি,।
ও ভেবেছে হয়তো ক্লাস শুরু আর প্রথমদিন ওর লেইট।
এসে শিহাবকে দেখে চিৎকার করে উঠে।
-শিহাব তুমি।
-সবার সাথে পরিচিত হতে আসলাম জানোই তো আমি কলেজের লিডার।
-হ্যাঁ হ্যাঁ জানি তো মিঃ আপনি সবার বস।
শিহাব আর জোনাকির কথা শুনছে ক্লাসের অন্য ছাত্রছাত্রী। সবাই বুঝে গেছে এদের মাঝে বিরাট কোনো সম্পর্ক।
শিহাব আবার বলতে শুরু করলো,।
-জোনাকি আমার খুব কাছের মানুষ, সবাই ওকে সম্মান করবে ক্লাসমেইট বলে কেউ ওর সাথে বেয়াদবি করবে না,। ও কারো বিরুদ্ধে নালিশ দিলে হাত-পা কারো সাথে থাকবে না।
শিহাবের কথা শুনে আহ্লাদে আধখানা হয়ে গেলো জোনাকি। নিজেকে কেমন জানি নেত্রী নেত্রী মনে হচ্ছে।
এতোক্ষণে মাথা তুলে উপরে তাকালো আরহি,। কি হয়েছে এতোক্ষণ কিছুই শুনেনি।
ও ব্যস্ত ছিলো হুমায়ুন আহমেদের আজ হিমুর বিয়ে বইটা পড়াই।
খুব মনোযোগ দিয়ে বইটা পড়ছিলো খুব করে চাইছিলো ছন্নছাড়া হিমু রেণুকে বিয়ে করে সংসারী হবে।কিন্তু শেষ পর্যায়ে সব লণ্ডভণ্ড করে দিলো হিমু।খুব রাগ করে বইটা পাশে রেখে তাকিয়ে দেখে জোনাকি এসেছে,।
উঠে চিল্লিয়ে জোনাকি কে ডাক দিলো।
-জোনাকি তুই চলে এসেছিস আয় আয় তোর জন্য জায়গা রেখেছি,।
জায়গা রেখেছি শুনে সবাই তাকিয়ে দেখে আরহি নিজের জায়গা বাদে অন্য জায়গায় খাতা দিয়ে রেখেছে যাতে কেউ এসে না বসে,।
আরহির এমন বাচ্চামি দেখে সবাই হাসতে থাকে,। কেউ কেউ বলছে
এটা কলেজ এখানে এসে ও স্কুলের বাচ্চাদের মতো অবস্থা।
জোনাকি মনে মনে আরহিকে গালি দিচ্ছে এই গাঁধাটা বোধহয় এখানে ও জ্বালিয়ে মারবে।
শিহাব হাসতে হাসতে জোনাকিকে বললো।
-এই এলিয়েন কে জোনাকি।
-ও আস্ত একটা গাঁধা আমার স্কুল ফ্রেন্ড সারাক্ষণ আঠার মতো পিছন পিছন থাকে। কিন্তু খুব ব্রিলিয়ান্ট সারাক্ষণ বইয়ে ডুবে থাকে।
-আচ্ছা ওর কথা বাদ দাও ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে চলে আসো।
জোনাকি আরহির পাশে গিয়ে বসলো আস্তে আস্তে আরহিকে গালি দিচ্ছে।
-কলেজে এসেছিস একটু স্মার্ট হো গাঁধি।
আরহি কিছু বুঝলো কি না কিন্তু মাথা নেড়ে হ্যা বুঝালো।
ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরছিলো আরহি তখনি শিহাবের গাড়ি এসে কাঁদায় পড়লো আরহির পুরো জামায় কাঁদা লেগে গেলো,।
গাড়ি থেকে মুখ বের করে হু হু করে হেসে উঠলো শিহাব,।
বাড়ির কাছের একটা ফার্মেসীর সামনে এসে রিকশা থেকে নামলো আরহি,।
-তুর্জ ভাই বাবার ওষুধ গুলো দিবে শেষ হয়ে গিয়েছে।
-তুমি বসো আমি দিচ্ছি একি তুমি কাঁদায় লেপ্টে আছো কেনো।
-আর বলো না বড়লোকের ছেলে গাড়ি ড্রাইভ করতে রাস্তার ধারের মানুষ চোখে দেখে না।
-তুমি কি এনি চান্স আমায় খোঁটা দিচ্ছো।
-আরে না তুর্জ ভাই তুমি কি আর অন্য সবার মতো।
-নাও ওষুধ গুলো নিয়ে বাসায় যাও।
আরহি চলে আসতে গেলো তুর্জ পিছন থেকে ডাক দিলো,।
-এই যে পিচ্চি আপনার সিভিট নিবেন না।
-প্রতিদিন আমায় সিভিট দাও কেনো।
-তুমি খেতে ভালোবাসো তাই দেই, আমি যখন বড় ডাক্তার হবো তখন সিভিট কোম্পানি তোমার নামে করে দিবো,।
-বড় ডাক্তার হলে কি আমার কথা মনে থাকবে তোমার।
-তোমাকে আমার পি,এস বানাবো,। সারাক্ষণ আমার পিছন পিছন থাকবে,।
-বয়েই গেছে আমার,।
-হেই পিচ্চি তোমাকে আমার রাণী বানাবো।
-দেখা যাবে সময় হলে।

No comments :

Post a Comment